River of My Blood is a gripping tale of love and loss. The novel chronicles the life of Boori, a wild wisp of a girl as she hopscotches into adulthood and married life with an older relative, faces the stigma of being infertile and then tries to come to terms with the birth of a deaf and dumb boy. Her private wounds reflect national traumas as Haldi, her East Pakistan village is swept by Muktijuddho-the nine month-long bloody war of independence from which Bangladesh emerged as a sovereign state in 1971. Caught in the spiral of violence, powerless against the brutality of the Pakistani army, the young widow faces the most momentous choice she has ever had to make. One of the most compelling accounts to emerge on war, women's rights and patriarchy, River of My Blood is certain to stay with the reader long after the last page has been turned.
Selina Hossain (Bangla: সেলিনা হোসেন) is a famous novelist in Bangladesh. She was honored with Bangla Academy Award in 1980. she was the director of Bangla Academy from 1997 to 2004.
সেলিনা হোসেন (জন্ম: ১৯৪৭) বাংলাদেশের অগ্রগণ্য কথাসাহিত্যিকদের অন্যতম। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বি এ অনার্স পাশ করলেন ১৯৬৭ সালে। এম এ পাশ করেন ১৯৬৮ সালে। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমীর গবেষণা সহকারী হিসেবে। তিনি ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমীর প্রথম মহিলা পরিচালক হন। ২০০৪ সালের ১৪ জুন চাকুরি থেকে অবসর নেন।
গল্প ও উপন্যাসে সিদ্ধহস্ত। এ পর্যন্ত ৭টি গল্প সংকলন, ২০টি উপন্যাস, ৫টি শিশুতোষ গল্প, ৫টি প্রবন্ধের বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও সম্পাদনা করেছেন বেশ কিছু বই। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক স্বর্ণপদক (১৯৬৯); বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮০); আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১); কমর মুশতরী স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৭); ফিলিপস্ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮); অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪)। তাঁর গল্প উপন্যাস ইংরেজি, রুশ, মেলে এবং কানাড়ী ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
সেলিনা হোসেনকে তুমুল পাঠকপ্রিয় কথাসাহিত্যিক বলা যাবে না। অনেকেই আমরা তার নাম শুনেছি, বইয়ের কথা পড়েছি। কিন্তু তাঁর কোনো লেখা পড়েছে এমন পাঠক হুমায়ূন আহমেদের প্রতিতুলনায় কম। অথচ তিনি খুব ভালো লেখেন।
প্রকৃত গুণী লেখকদের স্বীয় লেখার ধাঁচ থাকে। যা তাঁকে সগোত্রীয় বাকিদের চাইতে ব্যতিক্রমের কাতারে নিয়ে যায়। সেলিনা হোসেন ঠিক এই মাপের কথাসাহিত্যিক। তাঁর গদ্য অন্যরকম মাধুর্যে মাখা। ছোট ছোট বাক্যে তিনি লেখেন। সরলবাক্য সাধারণত তাঁর লেখায় প্রাধান্য পায়। তাই পড়তে আলাদা আনন্দ মেলে।
একাত্তরে যশোরের একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে 'হাঙর নদী গ্রেনেড' লেখা। মুক্তিযুদ্ধে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রায় সবাই কম-বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন। গুটিকয় দালাল বাদে একাত্তরে টিকে থাকা সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রত্যেকেরই বলার মতো ঘটনা রয়েছে। যশোরের এমন একজন জননীর মহত্তম ত্যাগের ঘটনাকে উপন্যাসের মাধ্যমে অমর করে রেখেছেন সেলিনা হোসেন৷
মুক্তিযোদ্ধার জান বাঁচাতে একজন দুঃখী মা তার বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী সন্তান রইসকে পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে তুলে দেন। দরিদ্র মায়ের একমাত্র অবলম্বন সন্তানকে তিনি দেশমাতৃকার জন্য উৎসর্গ করেছিলেন - এই বিরল ঘটনা সেলিনা হোসেন নিজস্ব শব্দবৈভবের মাধ্যমে এঁকেছেন।
চাষী নজরুল ইসলাম 'হাঙর নদী গ্রেনেড' নির্মাণ করেছেন। নব্বইয়ের দশকে জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশু স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে একাধিকবার এই ছবি বিটিভিতে দেখেছে। তবু কখনো অমিলন হয়নি। মায়ের সন্তানকে উৎসর্গের দৃশ্য সেলিনা হোসেনের চাইতে অনেকবেশি হৃদয়স্পর্শী ও বাস্তবধর্মী করে দেখাতে পেরেছেন চাষী নজরুল ইসলাম। কারণ তিনি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
সাহিত্যকর্মনির্ভর চলচ্চিত্র অনেকটাই অসফল হয়। কিন্তু চাষী নজরুল ইসলাম এক্ষেত্রে সেলিনা হোসেনের তুলনায় অধিক সফল হয়েছেন।
ছোটবেলার কথা। তখনও স্যাটেলাইট চ্যানেলের দৌরাত্ম্য ছিল না। বিটিভি ছিল বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম। মনে পড়ে, পুরো ডিসেম্বর মাস জুড়ে প্রতি শুক্রবার একটা করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র দেখানো হতো তখন। চমৎকার কিছু সিনেমাও নির্মাণ করা হয়েছিল। ওরা ১১ জন, জীবন থেকে নেওয়া, এখনো অনেক রাত, আগুনের পরশমণি, হাঙর নদী গ্রেনেড, মেঘের পরে মেঘ, জয়যাত্রা, শ্যামল ছায়া। আগুনের গাওয়া একটা গান ছিল-
ও আমার জন্মভূমি তুই স্বাধীন হবি কবে? আরও কত দুঃখ দিবি এ দুঃখ শেষ হবে কবে?
"এখনো অনেক রাত" সিনেমার গান। বড় দরদ দিয়ে গাওয়া! বুকের ভেতর কেমন উথাল পাথাল মায়া জাগায়। হাঙর নদী গ্রেনেড পড়তে গিয়ে বারবার মাথার ভেতর এই গানটা বাজছিল। হয়তো উপন্যাসের পটভূমি "মুক্তিযুদ্ধ" বলেই।
সেলিনা হোসেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস লিখেছেন সাতটি। প্রত্যেকটি উপন্যাসের প্লট জনজীবন থেকে উঠে আসা ঘটনা এবং চরিত্র নিয়ে সাজানো। একাত্তরে যুদ্ধের সময় যশোরের কালীগঞ্জ গ্রামের একজন অসীম সাহসী মা দুইজন মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচানোর জন্য নিজের মূক ও বধির সন্তানকে পাকিস্তানি মিলিটারির হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এই ছোট্ট পরিসরের বীরত্বের গাঁথাকে লেখিকা উপন্যাসের ব্যাপ্তিতে রূপ দিয়েছেন। তাঁর লেখনী অত্যন্ত চমৎকার। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনায় আমি এই চমৎকারিত্ব খুব কমই পেয়েছি।
বারো ছেলেমেয়ের সবচেয়ে ছোট কন্যার নাম বাবা আদর করে রেখেছিল বুড়ি। হলদিগাঁয়ের ভীষণ উচ্ছল আর কৌতুহলী মেয়ে বুড়ি প্রায় ট্রেনের ঝিকিমিকি শব্দে উদাসীন হয়ে অনেক দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে চাইতো। মনের দিক দিয়ে বেশী স্বাধীনতা চাইতো বলেই হয়তো কিছু বোঝার আগেই তার বিয়ে হয়ে যায় বিপত্নীক চাচাতো ভাই গফুরের সাথে আর বাঁধা পড়ে যায় সামাজিক বন্ধনে। যে সলীম কলীম ছিল তার খেলার সাথী হঠাৎ করেই তাদের মা হয়ে যায় বুড়ি। ধীরে ধীরে কৈশোর পেড়িয়ে আটপৌরে নারী হয়ে উঠে সে আর মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়। বহু অপেক্ষার পর জন্ম নেয় বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী সন্তান রইস, যার জন্য বুড়ির ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলনা। এর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। মুক্তির তীব্র বাসনা বুড়িকেও খুরে খুরে খায়। "জয় বাংলা" স্লোগান তার মনে প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি করে। বড় ছেলে সলীম গেছে যুদ্ধে। মেজ ছেলে কলীমকে পাকসেনারা অত্যাচার করে মেরে ফেলে। অথচ ছোট ছেলে দেশের সংকটময় মুহূর্তে কোন উপকারে আসছে না এই নিয়ে বুড়ীর মনে ভীষণ দুঃখ। একসময় দেশসেবার সুযোগও মিলে। দুইজন মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের নাড়িছেঁড়া সন্তানকে মিলিটারিদের বন্দুকের নলের মুখে তুলে দেয় সে। বুকের মধ্যে একটা দেশ রেখে বুড়ি একলা শুধু রইসের মা হতে পারেনা। সে হয়ে যায় সকল মুক্তিযোদ্ধার মা! আর এমন অনেক উৎসর্গের বিনিময়ে জন্ম হয় লাল সবুজ একটি পতাকার, একটি স্বাধীন ভূমির।
বেশ কয়েকবছর আগে পড়া বইটা। কিন্তু মুগ্ধতা সম্ভবত সারাজীবনেও কাটবে না। একটা বই কিভাবে এতো বিষাদময় সুন্দর হতে পারে!!! পড়ার সময় ঘোরের মধ্যে চলে গেছিলাম। আজও যখন বইটা নিয়ে ভাবি ঘোরে চলে যাই। একবুক কষ্ট নিয়ে পড়া শেষ করেছিলাম, কতো যে কেঁদে ছিলাম বইটা শেষ করে! কিছু মানুষের জীবনে সুখ আসে অল্প সময়ের জন্য তারপরও তারা নিজের সর্বস্ব দিয়ে অন্যের সুখের নিশ্চয়তা দিয়ে যান।
মুক্তি... অনেক ভারি একটা শব্দ। যার জন্য বহু মানুষ অকাতরে দিয়ে গেছেন নিজের সর্বস্ব। বইটা ফিকশনাল হতে পারে কিন্তু আবেগ খাঁটি বাস্তব।
যে মায়ের সন্তানেরা দেশকে স্বাধীন করার জন্য সমস্ত পিছুটান উপেক্ষা করে বীরের বেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে দ্বিধা করে নি তেমনই একজন মায়ের কাহিনী বইটাতে বর্ণিত হয়েছে।আর ফুটে উঠেছে পাকিস্তানিদের হৃদয়হীন বর্বরতা।
স্বাধীনতার সময় প্রতিটা মা-ই মনে হয় 'বুড়ির' মতো ছিলো।তারা যুদ্ধ করতে পারে নি তো কি হয়েছে, বীরপ্রসূ তো ছিলো। যাদের রক্তে এসেছে এই স্বাধীন দেশের লাল সবুজের পতাকা তারা তো তাদের মায়েদেরই প্রতিনিধিত্ব করে।তারা তো শহিদ, তারা অমর।
বইটা পড়ার সময় হারিয়ে গিয়েছিলাম হলদী গ্রামে।সাথে সেলিনা হোসেনের সাবলীল সুন্দর বর্ণনা তো হলদী গ্রামকে করে তুলেছিলো আরো মধুময়।আর বইটার শেষের দিকের ঘটনাটা যে কারও চোখকে আদ্র করে তুলবে তা নিশ্চিন্তে বলা যায়।এক কথায়, মুক্তিযুদ্ধের একখন্ড চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে।
প্রকৃতিগত ভাবে মানুষ স্বভাবতই অনেক কিছু লাভ করে থাকে কিন্তু এতো সহজে নির্দিষ্ট সময়ে আমরা এসব জিনিস পেয়ে থাকি যে এর ঠিক মূল্যটা আমরা দিতে পারি না। যে মা���ুষগুলো প্রকৃতির এই দান থেকে বঞ্চিত বা সঠিক সময়ের এই দান সঠিক সময়ে পায় না, অনেক সাধনা করে লাভ করে থাকে শুধু মাত্র সেই ভাগ্য ��িড়ম্বিত মানুষগুলোই প্রাপ্ত জিনিসের চরম মূল্য দিয়ে থাকে।
হলদী গাঁ এর মেয়ে বুড়ি। বুড়ি নামটা তার পিতৃ প্রদত্ত কিন্তু নামটাতে তার প্রবল আপত্তি থাকলেও হাজার চেষ্টা করে ও সে বুড়ি নামটা পাল্টাতে পারেনি। শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বুড়ি নামটাই মেনে নেয়।
নিজের গ্রাম ছেড়ে বুড়ির অন্য কোথাও যাবার সুযোগ না হলেও নতুন নতুন জায়গায় ঘুরতে তার অনেক পছন্দ। অচেনা জায়গাতে না যেতে পারলও একটা সময় সে নিজেকে শান্তনা দেয় অন্তত বিয়ের পর সে নিশ্চই নতুন একটা গ্রামে যেতে পারবে, কিন্তু সেটাও আর হয় না। চাচাতো ভাইয়ের বউ মারা যাবার ফলে বুড়িকে বিয়ে করে। এতে করে তার ঠাঁই হয় নিজেদের বাড়ীর উত্তরের ঘর থেকে দক্ষিণের ঘরে এবং বৈবাহিক সূত্রে দুটি ছেলে পায় সলীম ও কলীম কে।
যাদের সাথে বিয়ের দিন পর্যন্ত সে অনেক ছোটা ছুটি করেছে এবং তাদের কোলে করে ঘুরে বেড়িয়েছে। অনেক সাধনার পর বিয়ের আট বছর পর বুড়ির কোল জুড়ে আসে একটি ছেলে রইস কিন্তু সে কথা বলতে ও শুনতে পারে না, মুখ দিয়ে সবসময় লালা পড়ে। রইসের জন্মের ১৩ বছরে তার বাবা গফুর মারা যায়।
সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মে চলতে থাকে কিন্তু সময়টা ছিলো দারুন অসময়। ১৯৭১ সাল, চারিদিকে যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠলেও হলদী গাঁএর যুবকরা ছাড়�� এটা কেউ বুঝতে পারে না। বুড়ির বুঝতে একটু বেশীই সময় লাগে কিন্তু যখন বুঝতে পারে যুদ্ধ আসলে কি তখন নিজেকে তুচ্ছ মনে হয় দেশের কাজে না লাগতে পারাতে। নিজের প্রতিবন্ধী ছেলের সাথে নিজেকে তুলনা করতে থাকে। অবশেষে মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে নিজের প্রতিবন্ধী ছেলেকে তুলে দেয় পাকিস্তানি সৈনদের হাতে। যারা মায়ের চোখের সামনে ছেলেকে গুলি করে চলে যায়।
অল্পকিছু মানুষ বাদে, প্রতিটি মানুষের মাঝে দেশের প্রতি ভালোবাসাটা থাকে। সে ভালোবাসাটা সব সময় প্রকাশ পায় না বা বোঝা যায় না। সংকট কালে বা প্রযোজনের সময়েই শুধু তা প্রকাশ পায়। আর তার জন্য প্রিয় কিছু বিসর্জন দিতে দ্বিধা করেনা। আমাদের এই দেশটা এখন হয়তো স্বাধীন কিন্তু কত মানুষের প্রিয় মানুষগুলোর প্রাণের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন দেশে বাস করি। দান জিনিসটা এতোটা সহজ কিছু ব্যপার নয়। মুখে দান করতে চাইলে বুকে বাধে। কিন্তু সেই অসময়ে দেশের সংকট কালে মানুষ কত ধৈর্য্য আর সাহস দেখিয়ে নিজেদের প্রিয় মানুষ গুলোকে অকাতরে দান করে দিয়েছে দেশের জন্য। যাদের রক্তে ভিজে গেছে মাতৃভূমির মাটি। কিন্তু আমরা তার মূল্য দিতে পারি নাই পারবোনা হয়তো কখনো।
'বড়ু চণ্ডীদাসের কাব্য', 'মধ্যযুগের বাঙলা গীতিকবিতা'সহ বর্তমানে সম্মান শ্রেণীর বাঙলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ের পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত রেফারেন্স বইগুলোর বিষয়বস্তুর সাথে নামকরণে কিঞ্চিৎ দূরত্ব লক্ষ্য করা যায়। খেয়াল করলে আরো দেখা যায়, এ সকল বইয়ের সম্পাদনার কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত ধ্বনিবিজ্ঞানী প্রফেসর মুহম্মদ আবদুল হাই। বলাবাহুল্য, পাকিস্তান আমলে মৃত্যুর আগেই তিনি এসব করে যান। পাঠক্রম প্রণয়নের দায়িত্ব তাঁর হাতেই ছিল। যেহেতু ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হয় এবং ভাষার প্রশ্নে আমাদের সাথে পাকিস্তানিদের প্রথম বিরোধ সূচিত হয়, সেহেতু একাত্তরপূর্ববর্তী সময়ে মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের এ কাজগুলো যথেষ্ট দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে।
'হাঙর নদী গ্রেনেড' নিয়ে লিখতে গিয়ে অপ্রাসঙ্গিক ভূমিকা ফেঁদে ফেলেছি কিনা, চিন্তার বিষয়। আসলে উপন্যাসে বাউলসম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নীতা। তার সাথে উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বুড়ির ছোটবেলা থেকেই সদ্ভাব গড়ে ওঠার কথা জানা যায়। নেত্রকোণার সোমেশ্বরী নদীর তীরবর্তী জনপদের যুদ্ধকালীন বাস্তবতা মোটাদাগে 'হাঙর নদী গ্রেনেড' উপন্যাসে উঠে এসেছে। অবশ্য সময়রেখা বিবেচনায় চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি থেকে ১৯৭১ সাল, বলা যায় এই এক প্রজন্মকালের কাহিনী এ উপন্যাসে গ্রথিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে যদি বলি এটা কেবল মুক্তিযুদ্ধেরই উপন্যাস, কিছু ভুল বোধকরি রয়ে যায়। বরং স্বাধীনতার উপন্যাস বলতে পারলে এর উপজীব্য বোঝানো সহজ হবার কথা। সেক্ষেত্রে বুড়ি এবং নীতাকে আগাগোড়া আক্ষরিক অর্থেই প্রতীকী চরিত্র হিসেবে বুঝতে হবে পাঠকের। মার্ক্সবাদী চিন্তাচেতনা মন থেকে সরিয়ে রেখে বলা যায়, কখনো সম্পূর্ণ স্বাধীন, কখনো সমাজের শিকলে বাঁধা বুড়ি। কিন্তু নীতা জাগতিক নিয়মকানুনের বন্ধনে আবদ্ধ কেউ নয়। বরং গাঁয়ের পথে পথে ঘুরে গানে গানে মনের মানুষ খুঁজে দিন যায় তার। নেই মায়ের শাসন, ভাইয়ের চোখরাঙানি অথবা স্বামীর মারধর।
মারধর গফুরও করেনি কখনো বুড়িকে। বরং দাম্পত্যপ্রেমের এক বিরল নিদর্শন দেখা যায় তাদের মধ্যে। সমসাময়িক বাঙালি সমাজের জীবনালেখ্য 'হাজার বছর ধরে' লিখতে গিয়ে জহির রায়হান দেখিয়েছিলেন হালিমাদের ওপর কীভাবে স্বামিত্ব ফলায় আবুলেরা। এ ব্যাপারটি 'হাঙর নদী গ্রেনেড'-এর সাথেও সংগতিপূর্ণ। সে কথায় একটু পরে আসছি।
প্রসঙ্গত নিম্নবর্গের সাহিত্যে বিশুদ্ধ দাম্পত্যপ্রেমের অস্তিত্ব তেমন বাস্তব নয়। জসীম উদ্দীনের লেখায় যদিও কিছুটা দেখা যায় এ বিষয়টি।
গফুরের সাথে বুড়ির বয়সের পার্থক্য, উপন্যাসের সময়রেখা, সামাজিক বাস্তবতার নিরিখে এমন কিছুর সৃষ্টি নিশ্চিতভাবেই সেলিনা হোসেনের বড়ো কৃতিত্ব।
এক্ষেত্রে তিনি লিখেছেন -
"শান্ত পানিতে নৌকা ভাসে। গফুর বৈঠা ছেড়ে দিয়ে বুড়িকে কাছে টেনে নেয়। বুড়ির কিশোরী ঠোঁটে অপূর্ব মাধুর্য। গফুর পাগলের মতো নেশা খোঁজে। দিক ভুল হয়ে যায় গফুরের। কোনো দিশা করতে পারে না। বুড়ি এখন অনেক কাছের-অনেক উষ্ণ-অনেক মিনতি ভরা। ..."
অন্যদিকে জসীম উদ্দীনের 'বোবা কাহিনী' উপন্যাসে দাম্পত্যপ্রেম এসেছে -
"বউ একটু হাসিয়া আঁচলের বাতাসে কেরোসিনের কুপিটি নিবাইয়া আজাহেরের মুখে একটি মৃদু ঠোক্না মারিয়া বিছানার উপর যাইয়া শুইয়া পড়িল। আজাহের বউ-এর সমস্ত দেহটি নিজের দেহের মধ্যে লুকাইয়া তার বুকে মুখে ঘাড়ে সমস্ত অঙ্গে মুখ রাখিয়া কেবলই বলিতে লাগিল, "আমার একটা বউ ঐছে--সোনা বউ ঐছে--লক্ষ্মী বউ ঐছে--মানিক বউ ঐছে। তোমারে আমি বুকে কইরা রাখপ--তোমারে আমি কলজার মধ্যে ভইরা রাখপ--আমার মানিক, আমার সোনা, তোমারে মাথায় কইরা আমি মাঠ ভইরা ঘুইরা আসপ নাকি? তোমারে বুকে কইরা পদ্মা গাঙ সাঁতরাইয়া আসপ নাকি? আমার ধানের খ্যাতরে, আমার হালের লাঠিরে--আমার কোমরের গোটছড়ারে--আমার কান্ধের গামছারে। তোমারে আমি গলায় জড়ায়া রাখপ নাকি?"
দেখা যাচ্ছে, জসীম উদ্দীন সংলাপ রচনায় জোর দিয়ে লিখেছেন। অন্যদিকে সেলিনা হোসেন ডিটেইলিংয়ে ভর করে গল্প বলে গেছেন।
প্রেম প্রকাশের আরেকটি ধরণ আমরা লক্ষ্য করি আহমদ ছফার লেখায় -
"সোহিনী, তুমি আমার কাছে অর্ধেক আনন্দ, অর্ধেক বেদনা। অর্ধেক কষ্ট, অর্ধেক সুখ। অর্ধেক নার���, অর্ধেক ঈশ্বরী। তোমাকে নিয়ে আমি কি করবো! তোমার টানা টানা কালো চোখের অতল চাউনি আমাকে আকুল করে। তোমার মুখের দীপ্তি মেঘ-ভাঙা চাঁদের হঠাৎ ছড়িয়ে যাওয়া জোছনার মতো আমার মনের গভীরে সুবর্ণ তরঙ্গ জাগিয়ে তোলে। দিঘল চিকন কালো কেশরাশি যখন তুমি আলুলায়িত করো, হাওয়া-লাগা চারাগাছের মতো আমি কেমন আন্দোলিত হয়ে উঠি। তোমাকে নিয়ে আমি যাবো কোথায়? সোহিনী তুমি কি নিদারুণ সঙ্কটের মধ্যে আমাকে ছুঁড়ে দ���য়েছো? ... এই না-চলা না-দাঁড়ানো অবস্থা, তার কী যে যন্ত্রণা!"
এতে দাম্পত্য প্রেম নেই, তবে প্রেম প্রকাশের উচাটন ভাবটি এখানে স্পষ্ট। অবশ্য ছফার লেখায় অনুমিত কারণে দাম্পত্যপ্রেম অবহেলিত থেকেছে। আমরা
বলছিলাম বউ-পেটানো আবুলের কথা। বুড়ির সৎপুত্র সলীমকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নারী নির্যাতনকারী হিসেবে দেখিয়ে মূলত গফুর-বুড়ির সম্পর্ককে আর দশটা সম্পর্ক থেকে আলাদা করার চেষ্টায় সফল ঔপন্যাসিক। গফুরের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত উপন্যাস একই ধীরগতিতে এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু একঘেয়েমি পেয়ে বসবে না পাঠককে। তার কৃতিত্ব পুরোটাই সেলিনা হোসে���কে দিতে হয়।
উপন্যাসের শুরুর দিক থেকেই প্রাকৃতিক প���িবেশের মনোরম বিবরণে মনোযোগ দিয়ে গেছেন ঔপন্যাসিক। বুড়ির চোখ দিয়ে আমাদের দেখিয়েছেন কচুরিপানা আর শিমের বেগুনি ফুল, পুকুরে-খালে বাঁশঝাড়-ঝোপঝাড়ের বুনো সৌন্দর্যসহ বহু অভব্যসুন্দর প্রাকৃতিক বাস্তবতা। আবার প্রতীকায়িত পরিচর্যায় আঁধার, মাছ-শালুকের আলঙ্কারিক প্রয়োগ এমনকি কুটুম পাখির প্রাসঙ্গিকতায় গ্রামে মিলিটারি আগমনের বর্ণনা - এসব নিঃসন্দেহে ঔপন্যাসিকের শিল্পরুচির পরিচয় দিয়েছে। নারীপুরুষের যৌন সম্পর্কের মতো স্পর্শকাতর প্রসঙ্গের অবতারণায়ও শিল্পমান ক্ষুণ্ণ হয়নি।
জসীম উদ্দীনের 'বোবা কাহিনী' উপন্যাসের উদাহরণ এখানেও টানা যায়। টানা যায় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আরণ্যক' উপন্যাসের প্রাকৃতিক পরিবেশের শিল্পিত বিবরণের উদাহরণ।
১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাতে বাঙালির ওপর একেবারে অতর্কিত আক্রমণ করে বসে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। কিন্তু তার আগে থেকেই তীব্র অসন্তোষের দানায় বাঙালিদের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা আসতে থাকে। বুড়ি এসব টুকটাক টের পেলেও বুঝে উঠতে পারেনি কী ঘটতে চলেছে। সেরকম অতর্কিতেই প্রথম শোনে দেশের অবস্থা ভালো না, মানুষ স্বাধীনতা চায়, দেশ স্বাধীন হবে। এখানেই বুড়ির আপত্তি অথবা দ্বিধা - স্বাধীনতা বুড়ি আগেও দেখেছে। এরকম দমবন্ধ পরিস্থিতি হয়নি তখন দেশে। স্বাধীনতার আনন্দে উদ্বেল হয়েছে সবাই। কিন্তু এবার কলীমের বিয়েটাই আটকে দিতে হলো স্বাধীনতার প্রয়োজনে?!
এ প্রসঙ্গে আবু ইসহাকের 'সূর্য-দীঘল বাড়ী' উপন্যাসের কথা তোলা যায়। 'হাঙর নদী গ্রেনেড'-এর আকস্মিক পটবদলের আগ পর্যন্ত যে একটা শান্তিপূর্ণ গ্রামীণ জীবনালেখ্য দৃশ্যমান, সেরকমই শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে ভূখণ্ডে পটপরিবর্তন দেখানো হয়েছে আবু ইসহাকের লেখায়। সেলিনা হোসেন বুড়ির আখ্যানে দুই স্বাধীনতা অর্জনের একটা তুলনামূলক চিত্র আঁকার প্রয়াস পেয়েছেন।
নীতাদের আখড়া পুড়েছে যুদ্ধের সময় গোলার আগুনে, অখিল বাউলের মতো যারা দেশ নিয়ে ভাবতো, তাদের বুকে চলেছে গুলি। শুধু অখিল বাউল নয়, তখন মনসুরের মতো হাতেগোনা কিছু বিশ্বাসঘাতক ছাড়া সবাই যে যার জায়গা থেকে দেশের জন্য কিছু করতে চেয়েছে মনেপ্রাণে। নীতা যেমন প্রেম, দেহতত্ত্ব ভুলে দেশ নিয়ে গান করেছে।
সমকালীন লেখায় Milton Rahman এমন এক বাউলকে এনেছেন তাঁর লেখায়। হরিহর বাউল প্রকাশিতব্য 'ইদ্দতকালে ভিন্ন স্বর' উপন্যাসে দেখানো এক দেশদরদী বাউল চরিত্র।
রমিজা সলীমকে মনে করে বেশি করে পিঠা পাঠিয়েছে। সেই পিঠার ভালোবাসা ভুলে সময়ের সবচে বড়ো ভালোবাসার ডাক, দেশের ডাকে সাড়া দিয়ে তখন যুদ্ধ করছে সলীম। যুদ্ধে গেছে রমজান আলীর ছোটো ছেলেরাও। প্রাণ দিয়েছে সলীমের ছোটভাই কলীম। তবু যখনই পাকসেনারা সলীমের ব্যাপারে জানতে চেয়েছে কিছু, সবাই একশব্দে বলেছে - জানিনা। শুধু বুড়ির মন ভরছিলো না। দেশের জন্য কিছু করবার তাড়না নিজের মধ্যে ত ছিলই। সে তাড়নার মন্ত্র আরো একজনের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সচেষ্ট সে - তার বহু সাধনার সন্তান রইস। অথচ রইস ছিল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী।
উপন্যাসে অসংখ্যবার বাঁকবদলের শিকার বুড়ির জীবনের সবচে বড়ো ট্র্যাজেডি যদি রইস হয়, তবে তার সবচে বড়ো শক্তির জায়গাও ছিল রইস। এই সবেধন নীলমণিকে পাওয়ার জন্যে যে সাধনা করতে হয়েছে বুড়িকে, তা তুলনাহীন। বুড়ি শৈশব থেকে আর দশজন থেকে আলাদা হয়েছে। জলিলের সাথেই যা একটু মিলত। ভাগ্যবিধাতা সেখানে মিল না রেখে মেলালেন গফুরের সাথে।
গফুরের মৃত্যুর পর শুরু নতুন সংগ্রাম। সলীম, কলীম, রমিজা, রইসকে নিয়ে সেই অস্তিত্বের সংগ্রামে ভাঁটা পড়ে রইস ছাড়া বাকি সকলে একে একে চলে গেলে। সল��ম যুদ্ধে, কলীম শহীদ, রমিজা বাপের বাড়ি।
তখন উত্তাল হলদী গাঁ। রমজান আলীর ছেলেদের আশ্রয় দিতে হাবাগোবা রইসের হাতে তুলে দেয় ঘরে লুকানো এলএমজি। ওদিকে ঘরের ভেতর মটকায় লুকিয়ে আছে দুই মুক্তিযোদ্ধা। পরক্ষণেই গুলির শব্দের সাথে রইস একটা টকটকে লাল তাজা বোমা হয়ে গেছে। বুড়ি হয়ে গেছে সারা বাঙলার দামাল ছেলেদের মা।
(উপন্যাসটি অবলম্বনে 'হাঙর নদী' নামে একটা সিনেমা করার পরিকল্পনা হয়। তখন কিশোর রইসের চরিত্রে সালমান শাহকে নিয়ে শুটিং হয়েছিল। সে সময় কাজটি শেষ করা যায়নি অজানা কারণে। পরে ১৯৯৭ সালে 'হাঙর নদী গ্রেনেড' নামেই পুনর্নির্মাণ করা হয় ছবিটি। তখন সালমান আর বেঁচে নেই। রইস চরিত্রটি করেছেন অভিনেতা বিজয় চৌধুরী। বুড়ির চরিত্রে ছিলেন অভিনেত্রী সুচরিতা।)
🅒 রেজওয়ান আহমেদ শিক্ষার্থী, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য (৬ষ্ঠ আবর্তন) বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।
This entire review has been hidden because of spoilers.
উপন্যাসটির পটভূমি হলদী গাঁ, কেন্দ্রীয় চরিত্র বুড়ি। বুড়ি এক ছোট্ট মেয়ে, যে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে গ্রামের আর পাঁচটা মেয়ে থেকে একেবারে আলাদা হয়ে। সাধারণ মেয়েদের যেমন ঘরকন্নার স্বপ্ন থাকে, বুড়ির তা অনুভূতিতে তেমন দোলা দেয় না। বরং তার মনের তল পাওয়াই দায়। সে আকাশের পাখি হতে চায়, নদীর মাঝি হতে চায়। চায় দূর-দূরান্তে হারিয়ে যেতে। কিন্তু এক সাধারণ গ্রাম্য বালিকার পক্ষে তা সম্ভব হয় না, তাই সে তার মনের গহীনেই গড়ে তোলে তার নিজের সাম্রাজ্য। অল্প বয়েসেই তার বিয়ে হয়ে যায় তার দ্বিগুণ বয়সী দোজবর চাচাতো ভাইয়ের সাথে। আগের পক্ষের সলীম-কলীম নামে দুটো ছেলের মাও হতে হয় বুড়িকে। স্বামীর সোহাগ, সন্তানদের ভালোবাসা দুটোই পায় বুড়ি। কিন্তু তবুও একান্তই তার নিজস্ব সন্তানের জন্য হাহাকার বুড়িকে পরিণত করে এক পরিপূর্ণ নারীতে। রইস নামে একটি বোবা ছেলের জন্মের মধ্য দিয়ে এক অনাস্বাদিত স্বপ্নের শেষ হয় বুড়ির। গল্প এগোতে থাকে, দেশে শুরু হয় বিস্তর গণ্ডগোল। হলদী গাঁয়েও এসে লাগে আগুনের হলকা। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ছুটে যায় সলীম-কলীম। বুড়ি উৎসাহ দেয় মুক্তিযোদ্ধাদের। যুদ্ধে তার নিজেরও যাওয়ার আকুল ইচ্ছে থাকে, কিন্তু এই অক্ষমতাকে সে এমনভাবে পুষিয়ে দেয়, মনোজগতে গভীরভাবে আলোড়ন তুলে তা৷ স্তব্ধ করে দেয়, ভাবতে শেখায় নতুন করে 'মা' কে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেরা এই উপন্যাসটির মূল বিষয়বস্তু দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য এক মায়ের করুণ এবং সাহসী আত্মত্যাগের কাহিনী। নিজের নাড়িছেঁড়া ধনকে দেশের জন্য অকুতোভয়ে, অকাতরে বিসর্জন দেয়ার এই কাহিনী পড়লে চোখে জল আসে, মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময় এবং সেই সময়ের ত্যাগ স্বীকারকারী সকল মানুষকে অনুভব করা যায় হৃদয় দিয়ে, কৃতজ্ঞতায় মাথা নুয়ে আসে। এমন হাজারো বুড়ির জন্য আজ আমরা নিঃশ্বাস নেই স্বাধীন বাতাসে।
গ্রামের প্রেক্ষাপটে লেখা হলেও এক ফোঁটাও আঞ্চলিকতা পাইনি লেখায়, ব্যাপারটা হতাশ করেছে খুব। আর চলচ্চিত্র আগে দেখা হয়েছিল বলেই হয়তো পড়তেও অনেক বেগ পেতে হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের কোনো উপন্যাস, গল্প, কবিতা পড়লেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। কত ত্যাগ, কত কষ্ট, কত মৃত্যু....তারপরও কত আশা নিয়ে দেশটা স্বাধীন করা৷ আচ্ছা যাঁরা সব ছেড়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, তাঁরাও তো রাতের আঁধারে স্যাঁতসেঁতে কোনো এক জায়গায় শুয়ে শান্তি-সুখের একটা দেশের কথা ভেবেছিলেন। তাঁদের চোখে কত স্বপ্ন ছিল। নিজেরা এমন এক দেশ দেখে যেতে না পারলেও দেশের মানুষকে একটা নির্মল,হাসিখুশি জীবন দিতে চেয়েছিলেন। অথচ এতকিছুর পর আমরা আমাদের দেশটার কী অবস্থা করে রেখেছি! প্রতিটা শিরা উপশিরায় সমস্যা আর সমস্যা। সব আমাদেরই তো দোষে! দেশের মানুষের দিনকাল আর মুক্তিযুদ্ধের গল্পকে সমান্তরাল এ চিন্তা করলেই তাই বড্ড মন খারাপ হয়।
I don’t have the audacity to write e review of this book. Only two things i am a bit sad 1. Why didn’t i read this book earlier? 2. Why is there still printing mistake in the 9th edition of a book?
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে রচিত এক অসাধারণ উপন্যাস হাঙর নদী গ্রেনেড। নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা অপরিবর্তনীয় গ্রাম্য জীবনে বুড়ি নামক চরিত্রের মাধ্যমে গল্প প্রবাহিত হচ্ছিলো।গল্পের বিশেষ দিক ছিলো, পারিবারিক কথপোকথন এর মাঝে হঠাৎ মুক্তিযুদ্ধের আগমন সাথে চারিত্রিক পরিবর্তন গুলো লক্ষনীয় ছিলো।
বারো ভাই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট মেয়ে বলে বাবা আদর করে নাম রেখেছিলো বুড়ি, এই বুড়ি চরিত্রের রুপান্তর ও বিস্তৃত দেখা যায় উপন্যাসটিতে।
বুড়ির বাল্যকালের চাঞ্চলতা, উদাসীন মনোভাব, কিশোর বয়সে বিপত্নীক চাচাতো ভাই গফুরকে বিবাহ, খেলার সাথী সলীম কলীম সম্পর্কে হয়ে গেলো মা। এভাবেই শুরু হয় উপন্যাসের সাংসারিক, পারিবারিক কথপোকথন।
অতঃপর নানা প্রতিকূলতা নিয়ে গফুরের সাথে বিবাহের অষ্টম বছরে জন্ম নেয় গল্পের মহানায়ক রইস তথা বুড়ির নিজের সন্তান। সন্তানের মুখ দেখার পর বুড়ির সুখে��� খাঁচাটি বেশিদিন দীর্ঘস্থায়ী হলো না, দু-চারটে ছেলেমেয়ের মতো রইস স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছিলো না। বুড়ির কত সাধের আকাঙ্ক্ষার ছেলেটি হলো শেষমেষ বোবা-কালা বোধহীন। বুড়ির এতো বছরের আকাঙ্ক্ষা, আর্তনাদে পরিণত হলো। সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়ায় মায়ের বেদনার পাহাড় যে কত বড় সেটা এই উপন্যাস একটি বাস্তব প্রমাণ।
এরকম একটি সাংসারিক গল্প হঠাৎই পরিণত হয় মুক্তিযুদ্ধে।বুড়ি এক লাফে বয়স্ক হয়ে যায়। বিপত্নীক স্বামী গফুর আর পৃথিবীর আলোয় আলোকিত নেই, বুড়ির বুকের সবুজ বন হলদে করে স্মৃতির কৌটায় পরিণত হয় গফুর। বড় ছেলে সলীম ধরে সংসারের হাল, সাথে কলীমও।
এখানে লেখিকা সেলিনা হোসেন প্রশংসার দাবিদার, পরিবারের উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে গল্প এমনভাবে প্রবাহিত হচ্ছিলো যে, আমার মতো নবীন পাঠক ধরেই নিবেন এটা পরিবারভুক্ত কোনো উপন্যাস। কিন্তু লেখিকা সেলিনা হোসেন অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দিত ভাবে পাঠক মনোযোগ ধরে রেখে জাদুকরী লেখনীর ছলে এক বেদনার রুপকথা টেনেছে সত্যিই আমি অবাক!! আসলে সাহিত্যিকদের চিন্তাধারার তুলনা হয় না!!
উপন্যাসে তুলে ধরা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ সমসাময়িক সময়ের ত্যাগ-তিতিক্ষা, এদেশের মানুষের অসহায়ত্ব। তুলে ধরা হয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরামহীন অত্যাচারের কালোরেখা।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাড়িতে আশ্রয় নেয়া দুই মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে নিজের হাবা-বোবা-কালা সন্তানকে বিসর্জন দিয়ে মায়ের ব্যাকুলতা ভরা কান্না আমাকে নাড়িয়ে তুলেছিলো। দেশকে রক্ষা করতে এরকম মা-বোনদের ত্যাগ ও বিসর্জন ভাষায় প্রকাশ করা কষ্টসাধ্য। তাদের এসকল ত্যাগই আজ জাতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। মুক্তিযোদ্ধারা হয়তো নিজেদের জীবন ত্যাগ করেছেন, তাদের চেয়েও বড় ত্যাগের গল্প রচনা করে গেছেন বাংলার শত মা-বোনেরা।
বইয়ের শেষ কয়েক পাতা আপনাকে নাড়িয়ে তুলবে, দেশপ্রেমে আপনার মাথা নত হবে, আপনি অশ্রুসিক্ত হতে বাধ্য হবেন।
গতবছর প্রিয়াক্ষী দি পূজাবার্ষিকী "আনন্দবাজার" পত্রিকার সাথে বইটি উপহার পাঠিয়েছিলেন। ঘরে অতিথি এলে শুধু এক কাপ চা কেমন যেন শুকনো একটা ব্যাপার। বাড়াবাড়ি না হোক অন্তত একটু বিস্কুট তো দিতে হয়৷ দিদি হয়তো শুধু পত্রিকা উপহার দেয়াটা তেমন শুকনো ভেবেছিলেন। তাই বাড়তি পাওয়া সেলিনা হোসেনের "হাঙড় নদী গ্রেনেড" বইখানা।
সেই কত্তবছর আগে ছেলেবেলায় এই বইয়ের উপর নির্মিত চলচ্চিত্রটি দেখেছিলাম। দেশপ্রেমের অনুভূতি তখন যেন ঘোড়ার পিঠে উঠে সবে জিন ধরার মত। টগবগ করে ছোটার অনেক বাকি। তবুও মনে দাগ কেটে গেছে। অন্তত বইটা পড়ার সময় সেটা আবিষ্কার করলাম। সেই কবে দেখা দৃশ্যগুলো যেন বইটার লাইনে লাইনে চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো।
আমি পড়ার সময় চেষ্টা করেছি চলচ্চিত্রের বুড়ি (সুচরিতা) আর উপন্যাসের বুড়িকে আলাদা রাখতে। কোথায় সফল হয়েছি কোথায় তারা মিলেমিশে গেছে। সেই কৃতিত্ব অবশ্যই পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের।
হলদী গ্রাম ছিল একটা স্নিগ্ধ শান্ত নদীর মত। মাঝে মাঝে ঝড়ো বাতাসা, অবিরাম বৃষ্টি হত, সে নদীর জলে বজ্রের বিদ্যুৎ ঝলসাতো কিন্তু কখনো হিংস্রতাকে প্রশ্রয় দিত না। সেই নদীতে একদিন হাঙড় ঢুকে এলো। তার রক্ত চাই। ছিন্নভিন্ন ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ চাই। নারীদেহের উপর উল্লাস চাই। সেই হাঙড় তাড়াতে বুড়ির কি আছে দেবার বিসর্জন? বুড়ি নিজেই কি পারে গ্রেনেড হয়ে ফেটে পড়তে?
কিছু আগে পড়লাম লেখিকার "নীল ময়ূরের যৌবন" বইটি। হাজার বছর আগের চর্যাপদের সমকালে লেখা। আর হাঙড় নদী গ্রেনেডের প্রেক্ষাপট মাত্র অর্ধ শতাব্দী। তবুও যেন কার্পাস আর শ��মুল ফেটে মিলিয়ে দিয়েছি দুই সময় প্রবাহকে। ধনুক আর রাইফেল যেন বিদ্রোহ আর সময় মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। কাহ্নপাদ আর কলীমের রক্ত যেন গড়িয়ে মিশে গেছে মাটির প্রাচীন গভীরে। কত আলাদা আবার কতখানি মিল।
আবার হয়তো লেখিকার সৃষ্টির সাথে দেখা হবে। অন্য কোন সময় প্রবাহে, অন্য কোন স্থানে, অন্য কোন শব্দের পৃথিবীতে। তবে সে অবধি বইদুইখানা স্মৃতিতে অম্লান রইল।
একটি যুদ্ধ কতগুলো স্বজন হারানো বেদনার রূপরেখা টানতে পারে তা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঘাটলে পাওয়া যাবে। তেমনই এক গল্প সেলিনা হোসেনের হাঙর নদী গ্রেনেড। যশোরের কালীগঞ্জের সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখিত এ উপন্যাস ছুঁয়ে যাবে আপনাকে, নাড়া দিয়ে যাবে আপনার দেশপ্রেমকে, শ্রদ্ধায় নত করবে আপনার মাথা, কষ্টে অশ্রু আনবে আপনার দীপ্ত চোখে। দুই মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের সন্তানকে বিসর্জনের কাহিনীর শেষ দুটি পৃষ্ঠা আপনার ভেতরে কাঁদাবে নিশ্চিত। মুক্তিযোদ্ধাদের চোখে পানি বেমানান, কিন্তু তাদের জন্য আমাদের চোখের পানি নিশ্চয়ই বেমানান নয়। তারা যে ত্যাগ করেছেন, তাদের চেয়েও ত্যাগের গল্প রচনা করে গেছেন বাংলার শত শত মা-বোনেরা। শেষের কয়েকটা কথা, বুড়ি নামক মহিলা যিনি কিনা তার হাবা-বোবা-কালা ছেলেকে বিসর্জন দিয়েছেন নিজ ঘরে থাকা লুকায়িত দুই মুক্তিযোদ্ধাকে বাচাঁতে গিয়ে, সেকথা গুলো পড়ার পর চোখের পানি ধরে রাখা আসলেই কষ্টের। "রইস তুই আমার কত সাধনার ধন রে। তোকে নিয়ে আমার বুকে কাঁটা ছিল। আজ তোর রক্তে সেই কাঁটা আমি তুলে ফেললাম।" সন্তান বিসর্জন দেয়া মায়ের সেই ব্যাকুল কান্না নাড়িয়ে দেবে আপনার ভেতর বাহির।
One of the very best novels that I have read in recent times and will probably remain in my all time best reads. Hangor Nodi Grenade is a typical Selina Hossain novel with its slow leisurely build-up. It is almost of epic dimensions, following the quest of its lead female protagonist, Buri, her childhood, marriage and old age. Somewhere she becomes synonymous with Motherland, Bangladesh. Seeking young honest blood to fight for her freedom. She is helpless, maybe embarrassed even, as a mother, that her own son cannot participate in the battle and yet there is a loaded symbol hidden within and its impact hits us with tremendous force. The novel had a great cathartic effect for me and has definitely made me a Selina Hossain fan.
বইটি পড়তে গিয়ে বারবার,ছোটবেলায় বিটিভিতে দেখা চাষী নজরুল ইসলামের একই নামের চলচ্চিত্রটির বিভিন্ন দৃশ্য মনে পড়ে গেল । প্রতিবছর বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবসে দেখাত,যার ফলে চলচ্চিত্রটি প্রায় ৪-৫ বার দেখা হয়ে গিয়েছিল । নেট ঘেঁটে জানতে পারলাম সত্যজিৎ রায়ও এটি নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি করতে চেয়েছিলেন,পরে নানা কারণে আর করতে পারেননি । যাইহোক,বইটির সবচে বড় বৈশিষ্ট্য সরলতা।বইয়ের চরিত্রগুলি সরল আর লেখার ধরণটাও সরল ।
বেশ অনেকদিন পর মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা কোন গল্প পড়লাম। মিশ্র অনুভূতি কাজ করে এইগুলা পড়ার সময়। সংগ্রামের কথা পড়ার সময় যেমন গর্ব হয়, কাছের মানুষের চলে যাওয়াটা কষ্টও দেয়। আসলে সবশেষে অনুভূতিটা ভালোর দিকে বেশি।
উনার লেখা এটাই প্রথম পড়লাম। ভালো লিখেন।আরও পড়ার ইচ্ছা আছে।
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে রচিত এক অসাধারণ উপন্যাস এটি। মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্ম না হলেও মুক্তিযুদ্ধের স্বাদ, গন্ধ এবং অাত্মত্যাগ যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে বইটি পড়ার সময়। দেশমাতৃকার জন্য শত মায়ের অাত্মত্যাতে গড়া এই স্বাধীন বাংলাদেশ। এই দেশ অনেক কষ্ট ও ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এক অহংকার। মনসুর এর মত শত বেজম্মা সন্তানেরা বিশ্বাসঘাতকতায় লিপ্ত হলেও তারা সার্থক হতে পারে নি। এটি একটি অসাধারণ বই।
An amazing book on the heart rending story of Bangladesh
This book is truly beautiful though it is about the terrifying times Bangladesh went through for her freedom. The story from a mother's point of view is so touching.
সবকিছুর একটা নাম থাকে। সেই নামের সাথে যুক্ত একটা পরিচয়, একটা সংজ্ঞা থাকে। সেই জিনিসটার একটা উৎসও থাকে। দেশপ্রেম একটা নাম। যত্রতত্র ব্যবহৃত হয় এই নাম। এর একটা সংজ্ঞাও আছে। যে যার মত করে তা ব্যবহার করে। তবে দেশপ্রেমের উৎসের কথা বললে, সত্যি বলতে এর একটাই উৎস আছে। মানুষের মানবিক অস্তিত্ব। মানুষের সকল মানবিক গুণাবলীর উর্ধে মানুষের যে রূপ, সেই রূপের ঝলকের একটি রশ্মি হল দেশপ্রেম। দেশের জন্য, গ্রামের জন্য, যে গ্রামে সে বড় হয়েছে, যে গ্রামকে, আহবমান বাংলার যে একটুকরো প্রকৃতিকে বুড়ি নিজের ঘর বলে মেনেছিল, আর নিজের স্বামীর ঘরকেই যে বলেছিল আড়ষ্ঠতার জায়গা, সেই ঘরের প্রতি ভালবাসা থেকে, এক মা তার নিজের সবথেকে দামি ধন, কত সাধনার, কত আদরের একমাত্র ছেলেকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল। কিসের অনুপ্রেরণায়? সে সাধারণ মেয়ে ছিল না, তার চরিত্রের রূপায়নেই তা ফুটে ওঠে। সে মানব মনের খাঁটিরূপের রূপায়ন। আর তাই সহজেই তার অনুপ্রেরণার উৎসটাও বোঝা গেল। এর থেকে ভাল করে দেশপ্রেমের সংজ্ঞায়ন আর হয় কি? ১৯৭১ এ কয়জন মা জেনে বুঝে নিজের ছেলেকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিল জানি না, তবে আমার মনে হয় কেউই যুদ্ধ কি জিনিস তা না বুঝেই নিজেদের ছেলেমেয়েদের উৎসর্গ করেন নি। এই উপন্যাস তাদের ত্যাগের স্মরণেই লেখা, তাদের ত্যাগের মানসিকতার সরূপ এই জাতিকে মনে করিয়ে দেবার উদ্দেশ্যেই লেখা।
একটা যুদ্ধ। স্বাধীনতার লড়াই। স্বাধীনতা, মানুষের সবচেয়ে মৌলিক অধিকার; যার জন্যে যুগে যুগে লড়াই হয়েছে সবচেয়ে বেশী। স্বাধীনতা ত্যাগ দিয়ে কিনতে হয়৷ ব্যক্তিগত যুদ্ধ দিয়ে কিনতে হয়। এই বই সেই ত্যাগের গল্প। ছোট থেকেই বুড়ির সব কিছুইতেই ছিল নির্লিপ্ততা। যেন কোন কিছুতেই কিছু আসে যায়না তার। নিজের ভিতরের জগতই ছিল তার সব কিছু। এই নির্লিপ্ততা শেষ ���য়েছিল সন্তানের কামনায়। আহারে কত মিনতি, কত সাধনার সে সন্তান। যে সন্তান কখনো তাকে মা বলে ডাকতে পারেনি। কখনো তার মায়ের কন্ঠ শোনেনি। সব বিপদ থেকে কষ্ট থেকে আগলে আগলে বুড়ি মানুষ করে তার সন্তান রইসকে। এই সন্তানকেই সে বলি দেয় স্বাধীনতার জন্য। তার দুটি যোদ্ধা সন্তান কে রক্ষা করার জন্য।
বইটা পড়ে আবারো সেই গান মনে পড়ে গেছে
"মুক্তির মন্দির সোপানতলে কত প্রাণ হলো বলিদান লেখা আছে অশ্রুজলে "
ছোটবেলায় বিটিভিতে এই সিনেমাটি অনেকবার দেখেছি। তবুও বই পড়ার সময় সম্পূর্ণ নত��ন মনে হয়েছে। কাহিনী সম্পর্কে ধারণা থাকলেও সেলিনা হোসেনের লেখার নিজস্ব স্টাইল নতুনত্বের স্বাদ দিয়েছে।
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র বুড়ি আমাদের বাংলা মায়েরই এক প্রতিচ্ছবি। উপন্যাসটি যে খুব সরল গদ্যে লেখা তা নয়, তবে পাঠকেরা এর সাহিত্যরস পুরোপুরি উপভোগ করতে পারবেন বলে আমি মনে করি। .
এক কথায় অসাধারণ! একাত্তরের বিষয় নিয়ে বই পড়েছি, পড়ছি, আরো হয়তো পড়ব। কিন্তু, সব গল্পই কেন যেন ভীষণ ব্যথা দেয় - সে স্মৃতিচারণই হোক, কিংবা কাল্পনিক। বুড়ির মত মনে হয়, কে যেন কলিজায় খামচে ধরল। জানি এই গল্পটিও হয়তো সম্পূর্ণ কাল্পনিক, হয়তো রইস নামে কেউ ছিল না, বুড়ি নামে কেউ নেই। রমিজা, সলীম, কলীম, গফুর - তারা কেউ নেই! নাকি সত্যিই আছে?
"Thoughts swam in her head.Words remained anchored in her mouth.Only the past stayed.Red was the colour of her earliest memories,the seeds that burst and rooted in the shallows where the cranes stalked fish."
The beauty that this book is will only be understood by a few and maybe some more in the late future. A gem.